প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ।
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক
উপদেষ্টার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যবসায়িক
প্রতিদ্বন্দ্বীর তিনজন লোককে
গুমের অভিযোগ উঠেছে।
মেজর
জেনারেল (অবঃ)
তারিক
আহমেদ সিদ্দিকী, নিরাপত্তা
ও সামরিক বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ
পর্যায়ের ব্যক্তি। হাসিনা
সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী
ব্যক্তিদের একজন, যিনি
শেখ রেহানার স্বামীর ভাই।
তারিক আহমেদের বিরুদ্ধে
প্রমাণসহ এই অভিযোগ করেছেন
সাবেক আর্মি কর্মকর্তা ও তার
এক সময়ের ব্যবসায়িক পার্টনার
কর্নেল শহীদ উদ্দিন
খান। যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে
'স্বেচ্ছা-নির্বাসনে'
আছেন।
শহীদ উদ্দিন খান দাবি করেন
যে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
'প্রচ্ছায়া
লিমিটেড' এর
তিন কর্মকর্তাকে সামরিক
বাহিনীর লোকজন জানুয়ারি মাসে
তুলে নিয়ে গেছে। অপহৃতদের
পরিবারগুলো এর সত্যতা নিশ্চিত
করেছে। আল জাজিরা এ সম্পর্কিত
ডকুমেন্ট পেয়েছে, যা
এই দাবিকে নিশ্চিত করে। শহীদ
খান বলেন যে, ডিজিএফআই
নয় মাস আগে আরও কয়েকজন কর্মকর্তাসহ
এই তিনজনকে অফিস থেকে তুলে
নিয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনা ঘটে
তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর স্ত্রী
শাহিন সিদ্দিকীর সাথে কোম্পানি
নিয়ে ঝামেলা হওয়ার ঠিক পরের
দিন। শাহিন সিদ্দিকী প্রচ্ছায়া
লিমিটেডের চেয়ারপার্সন ছিলেন।
এই প্রতিষ্ঠানটি হাসিনা সরকার
ক্ষমতায় আসার পরে গঠিত হয়।
কোম্পানির রেজিস্ট্রেশনের
কাগজপত্র থেকে দেখা যায় যে,
শুধুমাত্র
তারিক আহমেদের স্ত্রী-ই
নয়, তার
ভাই জামিল শাফি এবং দুই মেয়ে
নুরিন তাসমিয়া এবং বুশরাও এই
কোম্পানির ডাইরেক্টর পদে
আছে।
ডেসটিনির
২০০০ এর সাথে মিলে এই কোম্পানির
বেশ কিছু বড় রকমের জালিয়াতির
সম্পর্ক রয়েছে। এই সরকারের
পতন ঘটলে বড় ধরনের ঝামেলায়
পড়তে পারেন ভেবে শাহিন সিদ্দিকী
এই কোম্পানির সাথে জড়িত থাকার
কোন প্রমাণই রাখতে চান না।
২০১৭
সালের জুনে তারিক সিদ্দিকী
নিজে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এই
কোম্পানি বন্ধ করে ফেলার জন্য
শাহিদ উদ্দিন খানকে চাপ দেন।
তার স্ত্রী এই বিষয়টি নিয়ে
খুবই রেগে আছে জানিয়ে কোম্পানিটি
যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করার জন্য
হুমকি দেন।
২০১৮
সালের এপ্রিলে দুইজন অবসরপ্রাপ্ত
সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে
১২ জন লোক অফিসে ঢুকে ক্যাবিনেটের
তালা ভেঙ্গে ব্যবসায়িক কাগজপত্র,
হার্ডড্রাইভ
এবং অন্য ব্যবসার কাগজপত্রও
নিয়ে যায়। ২৭ বক্স মালপত্র
নিয়ে যাওয়া হয়। অফিসের সিসি
ক্যামেরা থেকে রেকর্ডিংও
মুছে ফেলা হয়। কোম্পানির
চারজনকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে
যাওয়া হয় তারিক সিদ্দিকীর
সরকারী বাসভবনে । সেখানে
যাবতীয় মালপত্র রেখে তাদেরকে
পুনরায় ডিজিএফআইয়ের অফিসে
নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদেরকে
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ৪৮ ঘণ্টা
পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই
চারজনের ভিতরে তিনজনকে;
খোরশেদ আলম
পাটোয়ারী, জহিরুল
হক খন্দকার এবং সৈয়দ আকিদুল
আলিকে গত ১৩ই জানুয়ারির সন্ধ্যায়
তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর
বর্ণনা অনুযায়ী, আকিদুলের
বাড়ি থেকে খোরশেদ এবং আকিদুলকে
২০ জনের একটা দল তুলে নিয়ে
যায়। এদের ভিতরে অনেকের গায়ে
র্যাবের পোশাক ছিল। এসময়
জহিরুলকে পাশেই দলটির একটি
গাড়িতে বসে থাকতে দেখা যায়।
অপহৃতদের
পরিবারের পক্ষ থেকে তারা কোথায়
আছে জানার সকল চেষ্টা ব্যর্থ
হয়। পরিবারের লোকজনও জীবনশঙ্কায়
আছে এখন।
এর
কিছুদিন পরেই শহীদ উদ্দিনের
বাড়িতে পুলিশ রেইড দেয় এই
দাবিতে যে, রাষ্ট্র
বিরোধী এবং সরকার বিরোধী
কর্মকান্ডে তিনি জড়িত। এছাড়া
তিনজন অপহৃত, তার
বৌ এবং তার নামে জঙ্গিবাদে
জড়িত থাকার কেস দেয় পুলিশ।
এই
সবগুলো ঘটনায় ঘটে শহীদ উদ্দিন
খান তার যুক্তরাজ্যের উকিল
দ্বারা তারিক সিদ্দিকী,
তার বৌয়ের
বিরুদ্ধে এবং গোয়েন্দা সংস্থার
বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার
জন্য অভিযোগ দায়ের করলে।
আল
জাজিরাকে দেওয়া বিবৃতিতে,
ডিজিএফআই সকল
অভিযোগ অস্বীকার করে। উল্টো
শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধেই
অভিযোগ করে যে, জিজ্ঞাসাবাদ
করবে বলে তার কর্মচারীদের
আত্মগোপন করার নির্দেশ দিয়েছে।
এছাড়া শহীদ উদ্দিন খান নানা
ধরনের বিতর্কিত কার্যকলাপ,
সামরিক পরিবেশ
ও নিরাপত্তা বিঘ্ন এবং সম্পত্তি
জালিয়াতির সাথে জড়িত বলা হয়।
তারিক
আহমেদ সিদ্দিকী এবং স্ত্রী
এ বিষয়ে মন্তব্য করার আল জাজিরার
অনুসন্ধানী দলের অনুরোধে
সাড়া দেননি।
উৎসঃ আলজাজিরা
অনুবাদঃ রকিব রাজন
মার্চ ২১, ২০১৯
Comments
Post a Comment